ঢাকা, সোমবার, ১২ মে, ২০২৫
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৮:৪০

তিন দেশে টাকা পাচারের কথা স্বীকার আবজালের

অনলাইন ডেস্ক
তিন দেশে টাকা পাচারের কথা স্বীকার আবজালের

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) আবজাল হোসেন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারের কথা স্বীকার করেছেন। দুদকের রিমান্ডে তিনি জানিয়েছেন, ৩ দেশে তার পাচার করা অর্থের পরিমাণ ৪১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ৫৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৭ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (৩৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা), কানাডায় ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫৫ কানাডিয়ান ডলার (২ কোটি ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা) পাচার করা হয়েছে।

আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের নামে মালয়েশিয়ায় পাচার করা হয়েছে ৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আফজাল নিজের নামে ৯ লাখ ২৯ হাজার ৬৭০ মালয়েশিয়ান রিংগিত (১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা) ও স্ত্রীর নামে ৮ লাখ ৫১ হাজার ৫২০ রিংগিত (১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা)। অবৈধ সম্পদ ও মানি লন্ডারিংয়ের পৃথক দুটি মামলায় ১৪ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেছেন আবজাল।

দুই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম রিমান্ড শেষে রোববার তাকে আদালতে পাঠান। এ সময় আবেদনে তিনি আসামিকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার অনুরোধ করেন। তবে আবজালের পক্ষে এদিন জামিন আবেদন করা হয়নি। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম এক মামলার রিমান্ড প্রতিবেদনে আবজালের স্বীকারোক্তির কথা তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে তিনি আবজালের অর্থ পাচারের প্রথমিক একটি অংশের বিষয় উল্লেখ করেন। দ্বিতীয় মামলার রিমান্ডে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে দুদক মনে করছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, দেশের বাইরে আবজালের পাচার করা টাকার পরিমাণ আরও অনেক বেশি। তার কাছ থেকে সেই তথ্য নেয়া হবে। রিমান্ড প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আবজাল অত্যন্ত প্রভাবশালী, ধূর্ত, অর্থলোভী ও প্রবঞ্চক।

মামলার তদন্তকালে ও জিজ্ঞাসাবাদে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালিত হিসাবে তার তিনটি কোম্পানি পরিচালনাসংক্রান্ত তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ অংক আরও কত পরিমাণ তা বের করতে আসামিকে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।’

৩ সেপ্টেম্বর আবজালের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, আবজাল হোসেনের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৩ টাকা মানি লন্ডারিং, ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪ টাকার জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে।

গত বছরের ২৭ জুন অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে আবজালের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। এক মামলায় শুধু আবজাল ও অপর মামলায় স্ত্রী রুবিনা খানমের সঙ্গে আবজালকেও আসামি করা হয়। দুদকের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলা দুটি করেন।

আবজালের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে আবজাল হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা জমা করেন।

অপরাধলব্ধ আয়ের এ টাকা পরে তিনি বিভিন্নভাবে উত্তোলন করে অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, মালিকানা আড়ালে হস্তান্তর এবং পাচার বা পাচারের প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকেন। তার নিজ নামে স্থাবর ও অস্থাবর অংশে গোপনকৃত ২ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৮৫ টাকাসহ জ্ঞাতআয়বহির্ভূত ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪৯ টাকার সম্পদ ভোগ দখলে রেখেছেন।

আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রুবিনা খানম নিজ নামে ট্রেড লাইসেন্স খুলে তার স্বামী আবজাল হোসেনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে প্রারম্ভিক মূলধন ছাড়াই কথিত ব্যবসা শুরু করেন।

এর আড়ালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সংশ্লিষ্ট মালামাল সরবরাহের নামে অবৈধ পন্থায় আর্থিকভাবে লাভবান হন। স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার পরিকল্পনায় নিজ নামে ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং রূপা ফ্যাশনের নামে উল্লিখিত তফসিলি ব্যাংকগুলোর ২৭টি বিভিন্ন প্রকার হিসাব চালু রাখেন।

সেখানে ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৩ টাকা জমা এবং পরে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা উত্তোলন করেন। রুবিনা নিজ নামের স্থাবর ও অস্থাবর অংশে গোপনকৃত ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকাসহ জ্ঞাতআয়বহির্ভূত বা অপরাধলব্ধ আয় ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪ টাকার সম্পদ তার স্বামী আসামি আবজাল হোসেনের সহযোগিতায় ভোগদখলে রেখেছেন।

মামলার পর থেকেই আবজাল পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। গত বছরের ২২ জানুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আবজাল ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।

গত বছর ২৭ জুন অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়। এক মামলায় শুধু আবজাল ও অপর মামলায় স্ত্রী রুবিনা খানমের সঙ্গে আবজালকেও আসামি করা হয়।

উপরে